কি করে বলবো তোমায় " পর্ব-৩ " Romantic Bangla Story"
কি করে বলবো তোমায় ®
ki kore Bolbo Tomay
পর্ব-3
Episode-3
আমার জীবনের সব অনুভুতি, পছন্দ অপছন্দ, সব গোপনীয় কথা ওই ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করা আছে।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো..
দড়জা খুলেই দেখি ঐশী....
আমি ছয় পাঁচ না ভেবে হুট করে ঐশী কে প্রশ্ন করলাম--
-- আপনি কি আমার ডায়েরি নিয়েছেন..?
ঐশী আমার কথায় তো পুরো হতবাক, ঐশী খুব রাগী কন্ঠে আমাকে উত্তর দিল--
-- কিহ..?
কি সব যাতা বলছেন আপনি..? আপনার কি মনে হয়, কারো ব্যক্তিগত ডায়েরি নিয়ে আমি কি করব..? আর আপনার এত বড় সাহস কি করে হয় এই বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করার.? আমি কি এতটাই চিপ, যে কারো ব্যক্তিগত জিনিসে না বলে হাত দেবো..?
--না আসলে কালকে তো আমি দরজা খুলে ঘুমিয়েছিলাম তাই ভেবেছিলাম....
-- কি কি ভেবেছিলেন আপনি..?(চোখ রাঙিয়ে)
-- না আসলে আপনি ছাড়া তো আমার ঘরে আর কেউ আসে না তাইইই.....
-- দেখুন আপনি কিন্তু এবার আপনার লিমিট ক্রস করছেন..
--আইম সরি, আমি দুঃখিত।
-- ঠিক আছে, আর বাই দ্যা ওয়ে, আপনি কালকে দরজা খুলে ঘুমিয়ে ছিলেন কেন..?
-- এমনি মনে ছিল না(মাথা নিচু করে)
কালকে তাহিয়া আর নানু কে এগিয়ে দিয়ে আসার পর সেই যে শুয়ে ছিলাম দরজা আটকাতে আর মনেই ছিল না, এই ফাঁকে হয়তো কেউ আমার ডাইরিটা নিয়ে গেছে।
-- এই নিন (আমার হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে)
--কি এটা..?
-- আমার জন্মদিনের ইনভিটেশন কার্ড।
-- আজকে আপনারও জন্মদিন??
--মানে, আজকে আর কয়টা জন্মদিনের দাওয়াত আছে আপনার..?
--না নেই.
-- তাহলে..?
-- এমনি জিজ্ঞেস করেছিলাম..?( মাথা নিচু করে)
--হুম, আর হ্যাঁ সকালে নাস্তা করেছেন.? আপনার তো আবার সকালে নাস্তা করার অভ্যাস নেই। সেদিন এসেছিলাম নাস্তা নিয়ে আপনি সেই যে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন পরে নাস্তা খাওয়াই হলো না..
--আসলে সকালে খুধা লাগে না আমার।
--আজব তো? সকালে আবার কার খুধা না লাগে? নাকি সকালে রোজা রাখেন আপনি?
--( আমি মাথা নিচু করে চুপ করে আছি)
--আচ্ছা রাতে খেয়ে ছিলেন..?
-- হুম..
-- কি খেয়েছেন রাতে..?
-- পায়েস.
--পায়েস..?পায়েস কোথায় পেলেন..? নাকি আপনি বানিয়েছেন..?
-- না না, একজন রিলেটিভ দিয়ে গেছে।
--আমার জানামতে তো আপনার এখানে কোন রিলেটিভ নেই। আচ্ছা যাইহোক, সন্ধ্যায় সময় মতো চলে আসবেন কিন্তু।
--( আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম)
আমি দরজাটা লাগিয়ে বিছানায় বসতেই আবার কলিংবেল বেজে উঠলো, দরজা খুলে দেখি আবার ঐশী...
-- কিছু বলবেন??
-- এই নিন..
-- কি এটা..?
-- আপনি কি এই বয়সে চোখে কম দেখেন নাকি, দেখতে পাচ্ছেন না এটা সকালের নাস্তা? এটা খেয়ে যেখানে যাওয়ার যাবেন ধরুন। (আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল)
নাস্তা টেবিলের উপর রেখে আবার ডাইরিটা খুজতে লাগলাম। পুরো ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম, কোথাও ডাইরিটা পেলাম না। তাহলে কি ডাইরিটা তাহিয়া নিয়েছে??
ও ছাড়া আর কে নিতে পারে.?
কাল রাতে যে ভাবে মুচকি মুচকি হাসছিল আমার তো মনে হয় ওই আমার ডায়রিটা নিয়েছে।
কিন্তু কাউকে না বলে কারো ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দেয়ার মেয়ে তো তাহিয়া না,,
তাহলে কি ঐশি..?
কিন্তু ঐশী তো ঐরকম স্বভাবের নয়। যথেষ্ট নম্র-ভদ্র স্বভাবের মেয়ে ও। একটু রাগী অবশ্য। বাবার একমাত্র মেয়ে বলে কথা।
3 মাস আগে ওদের বাড়িতে ভাড়ায় এসেছিলাম। দুমাস দেখাদেখিতেই চলে গেল। অনেক বার সামনাসামনি হয়েছিলাম। কিন্তু কথা বলিনি। দুমাস পর ঐশী জোরপূর্বক ই আমার সাথে কথা বললো।
আমার নাকি খুব অহংকার, মেয়েদের সাথে কথা বলি না ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু..
কিন্তু আমার ডায়েরী টা কি নিতে পারে..কে আসতে পারে আমার ঘরে..? রাতে কেন যে দরজা খুলে ঘুমিয়ে ছিলাম..
যাইহোক অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে বাড়ি থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে সোজা অফিসে চলে গেলাম। অফিস গিয়ে আমার সাথে নিয়োগ হওয়া সবার সাথে পরিচিত হলাম। তার মধ্যে একজন হলেন বেলাল ভাই। খুবই বন্ধু সুলভ মানুষ। খুব সহজে আমার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। পিয়ন কেবিন দেখিয়ে দিল, আমি আমার কেবিনে বসে প্রথম দিনের কাজ শুরু করে দিলাম। তবে লক্ষ্য করলাম পুরনো কর্মচারীরা বসকে নিয়ে মানে তাহিয়া কি নিয়ে কি যেন বলছিল।
ওদিকে আমি কান না দিয়ে নিজের কাজ করতে লাগলাম।
হঠাৎ পিয়ন এসে বলল তাহিয়া আমাকে ডাকছে, আমি উঠে গিয়ে তাহিয়ার রুমে গেলাম।দেখেই পুরা ক্রাশ খেলাম।
আজ আবার অন্যরকম সাজে দেখছি, মেয়েটা যে কত সুন্দর সাহিত্যে বর্ণনা করা ও দায়, ওরর সৌন্দর্যের কোনো তুলনাই হয় না। এতোটাই সৌন্দর্য ওর মধ্যে---
কালো শাড়ি, কানে ছোট্ট দুটো ঝুমকো, কপালে একটি কালো টিপ, নাকে ছোট্ট একটি নাকের নোত..চোখের নিচের কাজল টা যেন ওর সৌন্দর্য কে 10 গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।ঠিক যেভাবে ওকে কল্পনা করেছিলাম ঠিক সেভাবেই সেজেছে আজ।
হুট করে আমার মুগ্ধতায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে তাহিয়া চুটকি বাজিয়ে বলল--
-- এই যে মিস্টার কি দেখছেন এভাবে.?
মাথানিচু করে বললাম
-- কিছু না..
-- বসেন,
--থ্যাংকস
-- সকালে খেয়েছেন কিছু..??
--হ্যা
--কি খেয়েছেন শুনি??
-- খেয়েছি কিছু একটা
-- হুম, বুঝতে পেরেছি।
তাহিয়া পিয়ন কে ডেকে দু কাপ কফি আনালো এবং পিয়ন কে বলে দিল কেউ যেন কে রুমে ঢুকতে না পারে।
হুট করে আমার ডাইরির কথাটা মনে পরতেই তাহিয়া কে বললাম--
-- ম্যাম আমার একটা কথা বলার ছিল..
-- হ্যাঁ বল
-- আপনি কি কাল আমার ডাইরিটা নিয়েছিলেন.?
কথাটা বলতেই তাহিয়া হাসিমুখটা আমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেল, চোখ দুটো বড় বড় করে আমায় বলল --
--কিহ, কি বলতে চাস তুই.তোর এত বড় সাহস তুই আমাকে প্রশ্ন করিস. তোর কি মনে হয় তোর ব্যক্তিগত জিনিসে আমি হাত দিয়েছি..? আমি কি ওই ধরনের মেয়ে নাকি।
( আমি মাথা নিচু করে বসে আছি..আর তাহিয়ার রাগী চেহারাটা দেখছি। রাগলে যেন ওকে আরো সুন্দর লাগে। সে এক অসাধারণ সৌন্দর্য,,
এবার একটু নমনীয় হয়ে বলল--
--তা কি হয়েছে তোর ডাইরির,,ডায়াবেটিস (একটু হেসে)
-- আসলে সকাল থেকে না ডায়রিটা খুঁজে পাচ্ছিনা
--ও সো স্যাড. গোপনীয় কিছু ছিল নাকি ডাইরিতে?
--না আসলে
-- থাক থাক আর বলতে হবে না. দেখ খুঁজে পাস কিনা..? তবে আমি তোর ডাইরি-বাইড়িতে হাত দেই নি, ওকে..?
--জ্বি
-আচ্ছা এবার বল তুই হুট করে ঘর থেকে চলে গিয়েছিলি কেন, নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণটা কি জানতে পারি,..?
--কি করতাম ওখানে থেকে..?
--কি করতাম মানে..?
-- আম্মু চলে যাওয়ার পর বড্ড একা লাগছিলো নিজেকে। খুব একা, আব্বুও কাছে ছিল না। এতটা কষ্ট আমি জীবনে কখনো পাইনি, সব সময় আম্মুর ছায়া তলে ছিলাম তো তাই, আম্মুকে হারিয়ে প্রথম নিজেকে বড় অসহায় লাগছিল।
--তাই বলে ঘর ছেড়ে চলে যাবি..? তোর নিজের ঘর ছেড়ে.?
-- কি করতাম ওখানে থেকে..?
--আমাদের কাছে থাকতি. একসাথে. আমরা একসাথে থাকতাম..
--ভেবেছিলাম, কিন্তু মন সায় দেয়নি। আম্মুকে হারিয়ে একা থাকার তীব্র বাসনা জেগে উঠেছিল মনে। তাই চলে এসেছি।
-- তা কোথায় ছিলে এই 4 বছর..
--কচিতে় চলে এসেছিলাম, এখানেই ছিলাম চার বছর একটি ছোটখাটো কম্পানিতে চাকরি করেছিলাম। আম্মুর স্মৃতি নিয়ে এভাবেই চলছিল আমার দিন গুলো। তারপরে হঠাৎ কলকাতায় এসে একদিন আপনার সাথে দেখা।
--হুম, প্রেম করিস কারো সাথে..?( মাথা নিচু করে)
-- নাহ, হয়ে উঠেনি কখনো..কষ্ট গুলিই ভুলতে পারিনি আবার প্রেম..
-- কেন, এ চার বছরে কোন মেয়েকে পছন্দ হয়নি.?
--তেমন কেউ চোখে পড়ে নি আজও..
--গল্প লিখিস এখনো..?
-- নাহ ছেড়ে দিয়েছি..
--কেন..?
-- ভালো লাগে না এসব আর..
-- একটা সময় খুব সাহিত্য চর্চা করতে কলেজ লাইফে মনে আছে..?
--হুম
-- যে কোন মেয়ে তোর সাহিত্যে মুগ্ধ হয়ে যেত, শুধু ভালোবাসার সাহিত্য চর্চার জন্যই ডজনখানেক মেয়ের প্রেমের অফার পেয়েছিলি, তাই না..?
--হুম, কিন্তু এগুলো এখন অতীত
--আসলে তোর প্রেমের সাহিত্যে যে কোন মেয়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য..
--( মনে মনে বলছি শুধু তোমাকে মুগ্ধ করতে পারলাম না তাহিয়া)
তাহিয়া এবার চেয়ার থেকে উঠে ড্রয়িং রুমের সোফাতে গিয়ে বসলো, আমাকেও হাত ধরে নিয়ে আসলো। দুজনে একই সোফাতে বসলাম। আমাদের মাঝে চার আংগুলের ফারাক,
তাহিয়া হঠাৎ আমায় বলল--
-- চোখ দুটো বন্ধ করতো..
--মানে, কিছু বুঝলাম না..?
--তোর এত কিছু বোঝার দরকার নেই, তোকে যা বলছি তাই কর..?
--আসলে.....
-- এবার কিন্তু আমি রেগে যাচ্ছি..
ওর রেগে যাওয়ার কথা শুনে তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কারন আমি জানি ও রাগলে ঘূর্ণিঝড় ছড়িয়ে পড়বে..
এক মিনিট পর তাহিয়া বলল..
-- এবার চোখটা খুলতে পারিস..
চোখ খুলতেই আমিতো একেবারেই সারপ্রাইজ. হয়েগেলাম.
#চলবে_বন্ধু #To_be_Continue
ধন্যবাদ..
আরও পড়ুন
Post a Comment