কি করে বলবো তোমায়" পর্ব-৪" KI KORE BOLBO TOMAY" Episode-4 , Romantic love story Bangla
কি করে বলবো তোমায়®
পর্ব___4__/ 3য় পর্বের পর..
এক মিনিট পর তাহিয়া বলল..
-- এবার চোখটা খুলতে পারিস..
চোখ খুলতেই আমি তো একেবারেই সারপ্রাইসড--
একটা বিউটিফুল চকলেট কেক, তার ওপর সুন্দর আমার নাম লেখা। আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম আজ আমার জন্মদিন।
আমি তাহিয়ার দিকে তাকাতেই তাহিয়া মুচকি মুচকি হাসছে--
-- হ্যাপি বার্থডে টু ইউ এগেইন( তাহিয়া)
ওর এই ভালবাসাময় কান্ড দেখে নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসলো।
-- কিরে তোর চোখে পানি কেন..?
--না আসলে আম্মু চলে যাওয়ার পরে চার বছরে এত সুন্দর করে কেউ আমার জন্মদিন মনে রাখিনি।
--হুম, রাখবে কিভাবে..?
মনে রাখার মত মানুষের কাছ থেকে তো দূরে ছিলি।
-- তাও ঠিক.
-- এবার বেশি কথা না বলে কেক টা কেটে ফেল(আমার হাতে একটা ছুরি দিয়ে)
কেকটা কেটে তাহিয়াার মুখে একটু তুলে দিলাম, তাহিয়াও আমাকে একটু খাইয়ে দিল।
-- একটা কথা বলার ছিল..?
-- হ্যাঁ বল.
--আমার যে চকলেট ফ্লেভার পছন্দ আপনি কি করে জানলেন..?
-- সিক্রেট, বলা যাবে না (মুচকি হেসে)
দেখি তোর হাতটা দে তো..?
--কেন??
-- এত প্রশ্ন করিস কেন তুই..?
আমার হাতটা টেনে নিয়ে একটা দামি ঘড়ি পরিয়ে দিল।
-- সব সময় হাতে রাখবি আমার স্মৃতি হিসেবে..
--কেন আপনি কি কোথাও চলে যাচ্ছেন নাকি..?
--আমি আবার কোথায় যাব, তোর তো কোনো কমন সেন্স নেই, যখন তখন নিরুদ্দেশ হয়ে যাস তাই বললাম।
এই নে, (আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে)
-- কি আছে এটার ভেতর..?
-- খুলেই দেখ না..
শপিং ব্যাগ টা খুলে দেখি একটা ব্ল্যাক শার্ট যা আমার খুব পছন্দের..
--আমার যে ব্ল্যাক শার্ট পছন্দ আপনি কি করে জানলেন??
-- এটাও সিক্রেট থাক, পরে এক সময় বলব। এবার এটা খেয়ে নে( আমার হাতে একবাটি পায়েস ধরিয়ে দিয়ে)
-- আবার পায়েস..?
--হুম, তোর তো পায়েস খুব পছন্দের তাই না..
--হ্যাঁ, মায়ের হাতের পায়েস খেতে খুব পছন্দ করতাম কিন্তু আমার জন্য এত কষ্ট করারর কি প্রয়োজন ছিল।
-- তুই না একটু বেশি কথা বলিস, আর প্রশ্নটাও বেশি করিস। সবকিছু কি মুখে বলা যায়।
--মানে. বুঝলাম না কিছু..
-- তোর এত বুঝে কাজ নেই। পায়েস টা খেয়ে নে..
আমি পায়েস খাচ্ছি, তাহিয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। হঠাৎ টেবিলের উপর বাটিটা রেখে দিলাম।।
-- কিরে রেখে দিলি কেন..?
-- খাবার সময় কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমি খেতে পারি না. আমার খুব অস্বস্তি হয়.
--ওলে বাবালে,, এত লজ্জা..? আচ্ছা ঠিক আছে তুই খা আমি কেবিনে যাচ্ছি.
কথাটা বলেই তাহিয়া উঠে চলে গেল আমিও পায়েস টা খেয়ে ওকে বললাম..
--ম্যাম এবার আসি
-- ঠিক আছে, আর শোন লাঞ্চ টাইমে থাকবি কিন্তু।কোথাও যাস না। তোকে নিয়ে একটি জায়গায় যাব
-- কোথায় ম্যাম..?
--আবার প্রশ্ন..?
-- সরি
কথাটা বলেই ওর কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম, বেরিয়ে আসতেই দেখি সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে আছে। সে কি অস্বস্তিকর পরিবেশ।
অবশ্য অবাক হওয়ারই কথা অফিসের বসের সাথে নিশ্চয়ই এত সময় একসাথে কোন কর্মচারী কাটায়নি।
যাইহোক সবাই কে উপেক্ষা করে আমি আমার চেয়ারে গিয়ে বসলাম।
আমার পাশে বেলাল ভাই আমাকে হঠাৎ বললেন--
--এই যে তালহা ভাই শুনছেন
--জি বলুন
-- এখানকার পুরনো ইমপ্লোয়ীরা কি আলোচনা করছে জানেন..?
-- কি..?
-- আমাদের বস মানে ম্যাডাম নাকি প্রেমে পড়েছেন
-- মানে( একটু অবাক হয়ে)
--ম্যাডাম অফিসে জয়েন করেছেন প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল কিন্তু এই ছয় মাসে নাকি এই প্রথম ম্যাডাম শাড়ী পরে এসেছে এ নিয়ে সবাই বলাবলি করছে যে ম্যাডাম নাকি প্রেমে পড়েছেন..
--আমি একটু মুচকি হেসে বললাম, আপনার কি মনে হয় বেলাল ভাই..? ম্যাডাম প্রেমে পড়েছে..?
--আরে ভাই বসন্ত, বসন্ত, বসন্ত, চারিদিকে বসন্তের হাওয়া বইছে, কোকিল ডাকছে। প্রেমিকরা প্রেম খুঁজায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, এই হৃদয় ভালোবাসার ছোঁয়া চাইছে, এই হৃদয়ে ভালোবাসার পূর্ণতা দিতেই বসন্তের আগমন, কখন যে কার কার মনে প্রেমের ছোঁয়া লেগে যায় কেউ বলতে পারে না,(হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে)
সেই হিসেবে আমাদের মেডামও যে কারো প্রেমে পড়তে পারে..
-- আপনিতো খুব ভালো সাহিত্য বলতে পারেন তো।
-- আমি আর কই পারলাম.. আচ্ছা আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন??
--ম্যাডামের রুমে, কিছু ইম্পরট্যান্ট কাজ ছিল।
--দেইখেন ভাই, কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাইকেন, এর বেশি কিন্তু বাইড়েন না,জানেন তো আমাদের ম্যাডাম কিন্তু এখনো অবিবাহিত,,,( অট্টহাসি হেসে)
আমি মুচকি হেসে নিজের কাজ করতে লাগলাম। দেখতে দেখতে লাঞ্চ টাইম হয়ে গেল, সবাই ক্যান্টিনে খাবার খেতে গেছে। আমার একটু বেশি কাজ ছিল কাজটা শেষ করে উঠবো হঠাৎ ফোন বেজে উঠল, আননোন নাম্বার, রিসিভ করলাম --
--হ্যালো
-- এই তুই কোথায়..?
--কে বলছেন..?
-- তোমার অফিসের বস সোনা..?
-- ও সরি ম্যাম চিনতে পারিনি..?
--জলদি অফিসের নিচে যেই বড় রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে চলে আয়, তোর জন্য আমি অপেক্ষা করছি।
--জ্বি আমি এখনই আসছি.
রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখলাম তাহিয়া আমার জন্য দাড়িয়ে আছে,,
-- এই তুই কোথায় ছিলি এতক্ষণ..?
--একটু কাজ ছিল..?
--ওরে বাবারে একদিনেই কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে গেছেন..?
-- না আসলে
--থাক থাক এবার আয়.
আমি ও তাহিয়া আলাদা একটা কেবিনে ঢুকলাম। দুজন সামনাসামনি বসলাম।
-- ম্যাম আমাকে কেন ডেকেছেন এখানে..?
-- আসলে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করাতে তোকে এখানে নিয়ে এসেছি..
ওর মুখে কথাটা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম। তাহিয়ার বয় ফ্রেন্ড ও আছে। নিমিষেই মনের ভেতরটা কালো মেঘে ছেয়ে গেল। বুকের বাম পাশটায় যেন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।
হঠাৎ তাহিয়া বলে উঠল--
-- ন্যাকা বাবু তুমি, কিছু বোঝো না তাই না, রেস্টুরেন্টে মানুষ আসে কেন, খাওয়ার জন্য। আজ তোর জন্মদিন না, তাই আমার তরফ থেকে একটা ছোট্ট ট্রিপ তোর জন্য.
আমার মন থেকে যেন মেঘ গুলো কেটে গেল ওর মুখে কথা শুনে। বাপরে, কী সাংঘাতিক মেয়ে একটা কথা বলেই। প্রানটাই বের করে দিয়েছিল একেবারে..?
ইতিমধ্যেই ওয়েটার খাবারগুলো নিয়ে এসেছে। আমি যেন একের পর এক সারপ্রাইজড হচ্ছি। এখানে সব আমার ফেভারিট ডিশ, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, রূপচাঁদা, মিষ্টি মানে আমার ফেভারিট সব খাবারগুলি এখানেল উপস্থিত।
ওর দিকে তাকিয়ে বললাম --
--আমার সব পছন্দের খাবারগুলোর নাম আপনি কি করে জানলেন..?
--এটাও সিক্রেট থাক, পরে একদিন বলব। এবার বেশি কথা না বলে ঝটপট খেয়ে নে।
--হুম সিক্রেট সিক্রেট বলতে বলতেদিন কাবার করে দিলো, (মনে মনে)
আজকের দিনটা যেন আমার কাছে খুব স্পেশাল মনে হচ্ছে, তাহিয়ার সঙ্গ আমার মনে যেন একটা আলাদা প্রশান্তি এনে দিয়েছে।
তবে বুঝতে পারছি না আমার প্রতি ওর একই কেয়ারিং কেনো একটি দুঃখী ছেলের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে নাকি অন্য কোন অনুভূতি..?
খাওয়া শেষে তাহিয়া হুট করে বলল--
-- শোন আজকে আর অফিস করবো না, তোকে নিয়ে একটি জায়গায়ঘুরতে যাব..
--কিন্তু এভাবে অফিস কামাই করলে তো চাকরি থাকবে না
-- তাহিয়া চোখ রাঙিয়ে বলল,, তোর চাকরিটা নিবে কে শুনি, তোর অফিসের বসটা কে..?
-- আমি নিচে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলাম..
তাহিয়া হাসি, ওর চোখ গুলো যেন আমায় কিছু বলছে। যা আমি বুঝতে পারছি না। মেয়েটা একদিনেই এই হৃদয়ে অনেকটা জায়গা করে নিয়েছে, অবশ্য ওর জায়গায় এই হৃদয়ে আগেও ছিল।
কিন্তু অভাব ছিল শুধু তাহিয়ার সম্মতির যা আমাকে ওর থেকে দূরে যেতে বাধ্য করেছিল।
হঠাৎ করে ওর ফোনে কল এল, ও রিসিভ করে কথা বলারর পর মাথায় হাত দিয়ে বলল --
--আজকে আর কোথাও ঘুরতে যাওয়া হবে না রে..
-- কিছু হয়েছে.?
-- অফিস কর্তৃপক্ষ ইমার্জেন্সি মিটিং ডেকেছে খুব ইম্পরট্যান্ট।
--নো প্রবলেম আপনি যান।
--কিছু মনে করিস নারে, তবে প্রমিস কালকে তোকে নিয়ে অনেক সুন্দর একটি জায়গায় ঘুরতে যাব, প্লিজ কিছু মনে করিস না।
--কোন সমস্যা নেই আপনি যান.
তাহিয়া মিটিং এর জন্য তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল। আমি অফিসে গিয়ে বাকি কাজটুকু শেষ করে বাসায় চলে এলাম। এসে বসতে না বসতেই কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলে দেখি ঐশী,,,
--কিছু বলবেন আমায়
-- আপনি কিছু ভুলে যাচ্ছেন নাতো..?
-- কই না তো
-- ঘড়িতে কয়টা বাজে?
তাকিয়ে দেখি সাড়ে সাতটা.
--সাড়ে সাতটা বাজে..
-- আপনাকে কি বলেছিলাম?
--কি বলেছিলেন..?
--আশ্চর্য সকালে বলেছি আর এখনই ভুলে গেছেন। আজ আমার জন্মদিন আপনাকে সাতটা বাজে চলে আসতে বলেছিলাম।
--ও সরি ভুলে গিয়েছিলাম, আসলে অফিসের এত কাজ..
--থাক থাক আর কাজের বাহানা দিতে হবে না জলদি আসুন,
--জ্বি এখনই আসছি..
জলদি ফ্রেশ হয়ে ঐশীর বার্থডে পার্টিতে গিয়ে দেখলাম গোটাকয়েক আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব ছাড়া বেশি মানুষদের কে ইনভাইট করে নি এরপর ঐশী কেক কাটলো, সবাই ওকে উইশ করলো, গিফট দিলো।
আমি চেয়ারে বসে আছি ঐশী নিজ হাতে আমার জন্য কেক নিয়ে এসে আমার পাশে বসলো। কেক দিয়ে হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করল..
-- আচ্ছা আপনি কখনো প্রেম করেন নি..
--নাহ
--ও, কাউকে পছন্দ হয়নি কখনো.?
--মাথা নাড়িয়ে না বললাম। অবশ্যই কথাটা মিথ্যে। আমার প্রথম পছন্দ এবং প্রথম ভালোবাসা তাহিয়া।
আমি খুব দুঃখিত আসলে আপনার জন্য কোন গিফট আনতে পারলাম না আসলে মনে ছিল না তো তাই..
--না না কোন সমস্যা নেই
আচ্ছা আপনার কাউকে কখনো ভালো লাগেনি..?
আবার সেই অস্বস্তিকর প্রশ্ন.. মাথা নেড়ে না বললাম। ওর অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যেতে বললাম--
-- আসলে আজকে অফিসে না খুব ধকল গেছে আমি খুব টায়ার্ড কিছু যদি মনে না করেন এখন উঠতে চাই..
--না না ঠিক আছে, বুঝতে পারছি আপনি খুব টায়ার্ড সমস্যা নেই,,
-- ওকে তাহলে এখন আসি, বাই
-- বাই
চলে আসলাম আমার ঘরে। হঠাৎ আমার রুমে ঢুকে আমি যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না......
চলবে...
(পরবর্তী পর্বগুলো পেতে ব্লগটি সাবস্ক্রাইব করুন, এ্যাড দিন)
ধন্যবাদ...
Post a Comment